লাফিং গ্যাস কিভাবে মানুষকে হাসায় ?

 
১৭৭৫ সালে জোসেফ প্রিস্টলী প্রথম এই গ্যাসটি আবিষ্কার করেন আবার কারো মতে হামফ্রে ডেভী এই গ্যাসের আবিষ্কারক। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে স্যার হামফ্রে ডেভীই প্রথম এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করেছিলেন। স্বভাবতই তিনি প্রথম এই গ্যাসের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন। রাসানিকভাবে লাফিং গ্যাস হলো নাইট্রজেনের একটি অক্সাইড যাকে নাইট্রাস অক্সাইড নামে ডাকা হয়। মৃদ্যু মিষ্টি গন্ধযুক্ত বর্ণহীন এই অক্সাইড মানুষ নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে হাসির উদ্রেক ঘটে। এর প্রধান কাজ মূলত ব্যাথা কমানো হলেও এটি মানুষের মনে চনমনে ভাব তৈরী করে তাই একে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে লাফিং গ্যাস। লাফিং গ্যাসের কাজ করার ধারা নিয়ে মানুষের কৌতুহল দীর্ঘদিনের। পুরোপুরি সঠিকভাবে নাইট্রাস অক্সাইড কাজের ধারা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যখন নাইট্রাস অক্সাইড গ্রহণ করা হয় তা রক্তের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের ভিতর আমাদের মস্তিষ্কে চলে যায় (মজার জিনিস হলো এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ায় রক্তের সাথে মিশে হিমোগ্লোবিনের সাথে কোনোরকম বন্ধনে জড়ায়না। আর তাই মানবদেহে এর স্থায়িত্ব অল্প সময়ের জন্য). মস্তিষ্কে গিয়ে এই নাইট্রাস অক্সাইড NMDA (গ্লুটামেট রিসেপটর) এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে একই সাথে Parasympathetic GABA রিসেপটরকে উত্তেজিত করে তোলে। এই উত্তেজিত Parasympathetic GABA রিসেপটর কিছু নিউরোট্রন্সমিটার ক্ষরণ করে যার ফলে মানুষের হাসির উদ্রেক ঘটে, ব্যাথাবোধ হ্রাস পায় (Endorphins নাকম নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণে সাহায্য করে লাফিং গ্যাস এটি আমাদের ব্যাথাবোধ কমিয়ে দেয়)।

দীর্ঘদিন যাবৎ লাফিং গ্যাসকে পার্টির অনুসঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করা হয় আসছে। লাফিং গ্যাস বা নাইট্রাস অক্সাইড যে শুধু হাসির বোধ তৈরী করে তাই নয়, এর সীমিত ব্যবহার মামুষের মনে ফুরফুরে চনমনে ভাব এনে দেয়। উত্তেজিত Parasympathetic GABA রিসেপটর মনুষের ব্যাথাবোধ কমিয়ে দেয়। আবার ক্লোরোর্ফম আবিষ্কারের আগে একে মৃদু চেতনানাশক হিসাবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে নাইট্রাস অক্সাইডের সাথে ২০% অক্সিজেন যুক্ত করে একে নেশাদ্রব্য হিসাবেও ব্যবহার করা হয় কেননা বার বার লাফিং গ্যাস গ্রহণ করলে তা আসক্তিতে পরিণত হয়।

কিন্তু বেশি পরিমাণে লাফিং গ্যাস গ্রহণের পরিণাম কী? অল্পমাত্রার লাফিং গ্যাস বড়জোর ৫ মিনিট আমাদের শরীরে থাকে। অল্প লাফিং গ্যাস মানুষের হাসির কারণ হলেও বেশি পরিমাণে লাফিং গ্যাস গ্রহণ করলে তা মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করে এতে মানুষ সাময়িকভাবে অচেতন হয়ে পড়ে, স্নায়ু কোষের ক্ষতিসাধন হয়, এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনে।

1 comment: